বাসাইলে জঙ্গল থেকে নবজাতক উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক :
টাঙ্গাইলের বাসাইলে এক প্রবাসীর বাড়ির পাশ থেকে জীবিত নবজাতক উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়দের ধারণা- নবজাতকটি এ বাড়িতেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে। কেউ কেউ নবজাতক পুত্রসন্তানটি ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) সকালে উপজেলার কাশিল মধ্যপাড়া এলাকার প্রবাসী ছাত্তার মিয়ার বাড়ির গোসলখানা ও টয়লেটের পাশ থেকে সদ্যভূমিষ্ঠ নবজাতকটি উদ্ধার করা হয়।
বর্তমানে নবজাতকটি ছাত্তার মিয়ার স্ত্রী নিলুফা বেগমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তবে পুলিশ এসে নবজাতকটিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। নবজাতকটির সঙ্গে হাসপাতালে নিলুফা বেগম, তার ছেলে আকাশ ও আকাশের স্ত্রী নার্স লিমা আক্তারও গেছেন।
জানা যায়, প্রবাসী ছাত্তার মিয়ার বাড়ির গোসলখানা ও টয়লেটের সামনে ভোরে নবজাতকটি দেখতে পায় তার স্ত্রী নিলুফা বেগম। পরে তিনি বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি জানান। এক পর্যায়ে তারা সদ্যভূমিষ্ঠ নবজাতকটি উদ্ধার করেন। খবরটি মূহুর্তের মধ্যে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লোকজন এসে ভীড় জমান। সেসময় অনেকে নবজাতক পুত্রসন্তানটিকে দুই লাখ টাকায় কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর নিলুফা বেগম শিশুকে বিক্রি করতে রাজি হয়নি। নিলুফা বেগম শিশুকে লালন-পালন করবেন বলে জানান।
স্থানীয়রা জানান, প্রবাসী ছাত্তার মিয়ার বাড়িটি রাস্তা থেকে অনেক ভেতরে। একাধিক বাড়ির ওপর দিয়ে তার বাড়িতে যেতে হয়। ওই বাড়িতে নবজাতকটি কিভাবে এলো। নিলুফা বেগমের ছেলে আকাশ মিয়ার স্ত্রী নার্স হওয়ায় অনেকে ধারণা করছেন- নবজাতকটিকে ওই বাড়িতেই ভূমিষ্ঠ (ডেলিভারি) করা হয়েছে। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় রক্ত থাকায় এই সন্দেহটা তাদের আরও বেড়ে গেছে। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানান স্থানীয়রা।
নবজাতকটিকে দেখতে আসা পরীবানু নামের এক নারী বলেন, ‘ওই মহিলা মা হওয়ায় যোগ্য না। মা হওয়ার যোগ্য থাকলে তিনি ফুটফুটে শিশুটিলে এভাবে ফেলে যেতে পারতেন না। হয়তো ওই মহিলা অবৈধভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ায় ফেলে গেছেন। শিশুটির পরিচয় বের করে ওর মাকে শাস্তির আওতায় আনা দরকার।’
বাড়ির মালিক প্রবাসী ছাত্তার মিয়ার স্ত্রী নিলুফা বেগম বলেন, ‘রাত ৩ টার দিকে আমি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে টয়লেটে গেলে শিশুটি মা বলে ডাক দেয়। একে একে কয়েকবার মা বলে ডাক দিয়েছে। পরে আমি বাড়িতে থাকা ছেলে ও ছেলের বউকে ডেকে আনি। এছাড়া আরও কয়েকজনকে বিষয়টি জানানো হয়। এক পর্যায়ে টয়লেটের পাশ থেকে নবজাতকটিকে পাওয়া যায়। সেসময় শিশুটির শরীর ও কানে পিঁপড়া ছিল। ভালোভাবে শরীর ধূয়ে ও পরিষ্কার করা হয়। আমার দুই সন্তান রয়েছে। এই পুত্র সন্তানটিকেও আমার নিজ সন্তানের মতো করে লালন-পালন করতে চাই।’
কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান মিয়া বলেন, ‘নবজাতকটি কে বা কারা রেখে গেছে তা জানা যায়নি। যার বাড়িতে শিশুটি পাওয়া গেছে তিনিই শিশুটিকে লালন-পালন করবেন বলে আগ্রহ দেখাচ্ছে। পরে পুলিশ এসে নবজাতকটির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’
বাসাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ সরকার বলেন, ‘শিশুকে একটি বাড়ির পাশে পাওয়া গেছে। ওই বাড়ির টিউবওয়েল ও টয়লেটের সামনে রক্ত রয়েছে। নবজাতকটির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা এলে শিশুটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরুখ খান বলেন, ‘নবজাতকটিকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হবে। নবজাতকটির চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় নবজাতকটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
No comments