রাসেলস ভাইপার: নিধন নয়, ‘করণীয়’ যা জানাল সরকার
টাঙ্গাইল টাইমস ডেস্ক:
চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান ও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে সরকার।
এই জাতের সাপের কামড় থেকে রক্ষা এবং ছোবলে আহত হলে করণীয়ও বাতলে দিয়েছে তারা। জানানো হয়েছে, সাপের বিষের প্রতিষেধক সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে পাওয়া যায়।
সাপ নিধন যে আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ, সেটি স্মরণ করিয়ে এই কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে প্রাণীর ভারসাম্য রক্ষায় জোর দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
এক সময় বিলুপ্ত ঘোষিত সাপটির ফিরে আসা, জেলায় জেলায় সেটি ছড়িয়ে পড়া এবং ছোবলের শিকার মানুষের প্রাণ হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্ক এবং সাপ পিটিয়ে মারার একের পর এক ঘটনার পর শনিবার এমন বক্তব্য এল।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা দীপংকর বর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া, বোড়া বা উলুবোড়া) দেখা যাওয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এবং জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় অবগত।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা এবং জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই জাতের সাপটি চরিত্রগতভাবে আক্রমণাত্মক নয় জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে।”
মানুষের সঙ্গে এই জাতের সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে এতে বলা হয়, “এই সাপ সাধারণত নীচু ভূমির ঘাসবন, ঝোপজঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে।”
এক সময় বিলুপ্ত ঘোষণা করা সাপটির ছোবলের কথা ২০১৩ সালে জানা যায় রাজশাহীতে। উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র অঞ্চলের এক সময় দেখা যাওয়া সাপটি এরপর ছড়িয়ে যায় বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকায়।
গত এক বছরে রাজশাহী অঞ্চল ছাড়াও মানিকগঞ্জ, ফরিদপুরের, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ ২৬ থেকে ২৭ টি জেলায় এই সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
সব জায়গায় কৃষিজমি বা চরাঞ্চলে দেখা দিলেও দ্বীপ জেলা ভোলায় কৃষিজমির পাশাপাশি খেলার মাঠ এমনকি ঘরের ভেতরেও সাপ দেখে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ দিনেই পিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১১টি সাপ।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, “রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। তাই, সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানানো হল।”
সাপের কামড় এড়াতে করণীয়
বিজ্ঞপ্তিতে রাসেলস ভাইপার থেকে রক্ষার বেশ কয়েক উপায়ের সন্ধান দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে:
যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন।
রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করুন।
বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।
পতিত গাছ, জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয়
দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশনে- বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনে- হাত নড়াচড়া করা যাবে না। হাত পায়ের গিরা নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।
আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
ঘড়ি বা অলংকার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন।
দংশিত স্থানে কাটবেন না, সুঁই ফোটাবেন না, কিংবা কোনো রকম প্রলেপ লাগাবেন না বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।
সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান।
আতঙ্কিত হবেন না, রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাদুর্ভাব কমানোর তাগিদ
সাপ নিধন না করে প্রাকৃতিকভাবে ভারসাম্য রক্ষার উপায়ও বাতলে দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বেজি, গুঁইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ 'রাসেলস ভাইপার' খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এসব বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন।”
নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার ‘সংরক্ষিত প্রাণী’ জানিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, “রাসেলস ভাইপার ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ হতে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা হতে বিরত থাকুন।”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হল।
No comments