দেলদুয়ারে বাঁশ শিল্পের সুফলে অনেকেই স্বাবলম্বী
মাসুদ রানা, দেলদুয়ার:
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলার বর্ণী, বারোপাখিয়া, প্রয়াগজানি,পরাইখালি ও কোপাখি সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে চলছে বাঁশ শিল্পের কাজ । এ শিল্পে জড়িত কারিগররা তাদের পূর্ব-পুরুষের পেশাকে বুকে লালন করে মন বসিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে । তারা বাঁশ দিয়ে তৈরি করছে আকর্ষণীয় বিভিন্ন পন্য । এসব বাঁশ শিল্পজাত পন্যের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও বাজারে চাহিদা রয়েছে বলে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বর্তমানে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা গেছে । ফলে বাঁশ শিল্পের সুফলে আজ অনেকেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখছেন। সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে । সে কারনে বাঁশ শিল্প বর্তমানে মাথাইল বা জোয়াইল তৈরির কাজে থেমে নেই । এ অঞ্চলের কুটির শিল্পীরা বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন যুগের চাহিদা অনুসারে গৃহে ব্যবহার উপযোগি আকর্ষণীয় বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্প, ফলের ঝুঁড়ি, ফুল ধানী , টে,বাসকেট,চালুন,ঢালা সহ বিভিন্ন নকশার প্রয়োজণীয় অনেক পন্য । বাঁশ দিয়ে তৈরি সৌখিন এসব পন্য অনেকেরই নজর কারছে ।
জানা গেছে, উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের বর্ণী গ্রামে সব চেয়ে বেশি বাঁশ শিল্পের কাজ হয় । সে কারনে বর্নী গ্রামটি ঘীরে গড়ে ওঠেছে ইমরান ব্যাম্বো হ্যান্ডক্রাফটস্, মা বাবা হ্যান্ডক্রাফট,নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্র্যাফ্ট ও জাকির আহমেদ কুটির শিল্প নামের চারটি বাঁশ শিল্পজাত পন্যের কারখানা । সেখানে প্রতিদিন চলছে বাঁশ শিল্পজাত পন্য তৈরি ও বাজারজাত প্রক্রিয়াকরনের কাজ। প্রতিটি কারখানায় পন্যের মান উন্নয়নে কাজ করছেন নিজস্ব কারুশিল্পীরা । তারা এ শিল্পে জড়িত কারিগরদের দিকনির্দেশনা দিয়ে রুচিশীল সব পন্য তৈরি করে থাকেন । এসব পন্য দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আড়ং সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয় । এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানা গেছে । তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইন শপেও বিক্রি করা হচ্ছে এ অঞ্চলের বাঁশ শিল্পের আকর্ষণীয় বিভিন্ন পন্য ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বর্ণী গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পন্য । উপজেলার বেশির ভাগ বাঁশ শিল্পের কাজ বর্ণী গ্রামে হয়ে থাকে বলে সেখানে চারটি বাঁশ শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেছে । ফলে বাড়ি বাড়ি তৈরি এসব পন্য গ্রামের বাঁশ শিল্প কারখানা মালিকদের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয় ।
শিল্পের হাতের স্পর্শে অনেক দরদ দিয়ে আকর্ষণীয় করে তৈরি করা হয় বলে এ অঞ্চলের বাঁশ শিল্প পন্যের বাজার চাহিদা রয়েছে ব্যাপক । অথচ দক্ষ কারিগররের অভাবে বাজারের চাহিদার যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় কারখানার মালিকদের ।
বর্ণী গ্রামে নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্র্যাফট্ কারখানর কারিগর মোঃ হারুন মিয়া জানান , প্রায় ২৫ বছর ধরে বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন । বর্তমানেও বাঁশ শিল্পের কাজ করেই তার সংসার চলে । এছাড়া তাদের তৈরি পন্যর বাজার চাহিদা ভাল রয়েছে বলেও জানান ।
একই কারখানার কারিগর মনিরা বেগম জানান, প্রায় ৩ বছর ধরে কাজ করছেন । আর ওই কারখানায় কাজ কাজ করে সন্তান লালন-পালন সহ সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন ।
নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্র্যাফট্ কারখানার মালিক মোঃ নূরন্নবী বলেন, এ অঞ্চলের বাঁশ শিল্প পন্যের ভালো বাজার চাহিদা রয়েছে । অথচ দক্ষ কারিগররের অভাবে অনেক সময় বাজারের চাহিদার যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় । তিনি বলেন, এ শিল্পকে গতিশীল রাখতে সরকারিভাবে কারিগরদের উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এবং বিদেশ থেকে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি করা প্রয়োজন । তাহলে এ শিল্পের উন্নয়ন ত্বরানিত হয়ে দ্রুত এলাকায় সৃষ্টি হতো আরও কর্মসংস্থান । উপজেলায় দিন দিন কমে যেত বেকার নারী-পুরুষের সংখ্যাও ।
মা বাবা হ্যান্ডক্রাফট কারখানার মালিক ও কারুশিল্পী মোঃ শাহাআলম জানায়, বাল্যকাল থেকেই তিনি বাঁশ শিল্পে তৈরি পন্যগুলোর নকশা ও মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন । আর পণ্য তৈরির কাজ করেন কারিগররা ।
ডুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস মিয়া জানান, বর্তমান সরকার কুটির শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছেন । এতে সরকারী সহযোগিতা পেলে এ শিল্পের আরও উন্নয়ন হবে । তিনি আরও জানান, উপজেলার বর্ণী গ্রামে সব চেয়ে বেশি বাঁশ শিল্পের কাজ হয় । বর্তমানে বাঁশ শিল্পের সুফলে এলাকায় বেশ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে । ফলে গ্রামের বেকার নারী-পুরুষের সংখ্যাও কমেছে ।
এ ছাড়া আশ পাশের গ্রামগুলোতেও দিন দিন বাড়ছে এ শিল্পের কাজ ।
No comments