ভূঞাপুরে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ
মোঃ আব্দুর রহীম মিঞা, ভূঞাপুর:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার খন্দকার কুলসুম জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে মার্চ মাসে। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে। কাজ শুরুর পর পাঁচ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবন নির্মাণকাজে দেরি হচ্ছে। এদিকে নতুন ভবন নির্মানকাজ শেষ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে আগের পুরোনো টিনশেড ঘরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩ শ’র অধিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় নারী শিক্ষা প্রসারে ১৯৯৯ সালে সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান এর সহধর্মীনী কুলসুম জামান তার নিজ নামে উপজেলার রায়ের বাসালিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন খন্দকার কুলসুম জামান নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় । নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০০৯ সালে এমপিও ভূক্ত করা হয়। পরে কমবাইন্ড করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উর্নীত করা হয়।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ৩০ ফুট দৈর্ঘ একটি টিনের ঘর দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। পরে শ্রেণি কক্ষের অপ্রতুলতা ও পুরাতন ঘর জরাজীর্ণ হওয়ার চার তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মানের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এরপর টাঙ্গাইল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হলে টাঙ্গাইলের কাগমারীর মের্সাস লামিয়া ইন্টার প্রাইজ স্বত্বাধীকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক কাজটি পান।
ভবনটি নির্মাণের ৫৪৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩ মার্চ। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৭৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৬ শত ৫১ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে আগষ্ট মাসের ২ তারিখ নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন টাঙ্গাইল ২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির । কার্যাদেশ পাওয়া এবং কাজ শুরুর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় মের্সাস লামিয়া ইন্টার প্রাইজ স্বত্বাধীকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফারুক স্থানীয়দের কাছে কাজটি বিক্রি করে চলে যান। কাজটি ৮ লক্ষ টাকায় কিনে নেন মনিরুজ্জামান, মফিজ উদ্দিন, আলম । তখন থেকে ভবন নির্মান কাজটি কচ্ছপ গতিতে চলতে চলতে পাঁচ বছর পেরিযে গেলেও কাজ সম্পাপ্ত হয়নি এখনও।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পেরিযে গেলেও কাজ সম্পাপ্ত না হওয়া স্কুলে প্রধান শিক্ষক বলেন স্কুলে প্রায় ৩ শত’র অধীক ছাত্র ছাত্রী লেখা পড়া করে এখানে। তাদের লেখা পড়া উপযুক্ত শ্রেণি কক্ষ না থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার লাজুক অবস্থা বিরাজ করছে।টিনের ছোট ছোট কক্ষে গাঁদা গাঁদি করে বসে ক্লাশ নিতে হচ্ছে। ভবনটিতে দেয়ালে বৃষ্টিতে ভিজে শেওয়া পড়ছে। ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার ঘুরে কাজ শেষ করাতে পারি নাই। ৩ শ’র বেশির ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে ১শত ৫১ জন ছাত্রী । তাদের বসার নেই কোন কমন রুম। এতে বেশিরভাগ সমস্যায় পড়ছে ছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষক,স্টাফ, অফিস নিয়ে ছোট কক্ষে বসে দৈনিন্দিন কাজ সারতে হচ্ছে।
দির্ঘদিন কাজ শেষ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারি ফারুক জানান বন্যা, বৃষ্টি, মালামাল বহনের রাস্তা-ঘাটের নানা সমস্যা তুলে ধরে কাজ শেষ করা যাচ্ছেনা জানান। কাজটি বিক্রির বিষটি অস্বীকার করেন তিনি। অপর দিকে সাব কন্ট্রাক নেওয়া মফিজ জানান ৮ লক্ষ টাকায় ফারুক কাজটি আমাদের বিক্রি করে চলে যায়। পরে কাজটি করতে গিয়ে জানাতে পারি ফারুকের ব্যাংক লোন রয়েছে। তার ব্যাংক লোন পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আর কোন বিল উত্তোলন করা যাবে না । কাজটি কিনে নিয়ে ফারুকের সাথে মামলাসহ নানা সমস্যায জড়িয়ে পড়ায় কাজটি শেষ করতে এত সময় লাগছে। এখন খুব দ্রুত সময়ে ভবনের কাজটি শেষ করে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
স্কুলের সভাপতি খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল বলেন আমার মায়ের নামে স্কুলটি। সেখানে একটি ভবনের নির্মান কাজ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয় না এটা বিশ্বাস করা যায় না। তবে আমি আশা করবো যত দ্রুত সম্ভব নতুন ভবনের কাজটি শেষ করে লেখাপড়ার উপর্যুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিলে ভালো হয়।
পাঁচ বছরেও কুলসুল জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটির নির্মাণ কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন অফিসে আসেন আপনাকে সামনা সামনি দেখে তার পর এ বিষয়ে বক্তব্য দিব।
No comments