সেতুর প্রতীক্ষায় ৫০ বছর
তাইবুর রহমান, সখীপুর :
তিন উপজেলার ভুক্তভোগী মানুষেরা খেয়া নৌকা ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলছে অর্ধশত বছর। বর্ষায় খেয়া এবং শুকনো মৌসুমে বাঁশের সঁকোই বংশাই পারাপারের একমাত্র ভরসা। প্রত্যাশার অর্ধশত বছরেও শেষ হয়নি প্রতীক্ষার। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হচ্ছে বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী, শিক্ষার্থী ও পথচারিরা। সেতুটি নির্মিত না হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন তিন উপজেলার কমপক্ষে ৩৫ গ্রামের মানুষ। বংশাই নদের দু’পাশে তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী ‘কাউলজানী বাজার-কালিয়ান’ এলাকার খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণে দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা মিলে টাঙ্গাইল-৮ সংসদীয় আসন। একই আসনের সখীপুর উপজেলা থেকে বাসাইল উপজেলার মানুষের সেতুবন্ধন বংশাই নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। বাসাইলঘেঁষা কালিহাতী উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশ সখীপুর উপজেলা থেকে এ নদে বিভক্ত। তিনটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খেয়াঘাটের মধ্যে ‘কাউলজানী বাজার-কালিয়ান’ খেয়াঘাটটি অন্যতম। সখীপুর উপজেলার পশ্চিম এলাকা কালিয়ান, বাসাইল উপজেলার পূর্ব-উত্তর এলাকা কাউলজানী এবং কালিহাতী উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা গান্ধিনা। তিনটি উপজেলার ‘মোহনা’ কাউলজানী বাজার-কালিয়ান এলাকা ‘বংশাই নদ’ দ্বারা বিভক্ত রয়েছে। বংশাই নদে সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ওই তিন উপজেলার মানুষ।
ভুক্তভোগী গ্রামগুলো হচ্ছে,-- নদের পুর্বপাড় সখীপুর উপজেলার কালিয়ান, দাড়িয়াপুর চাকলাপাড়া, কৈয়ামধু, বেতুয়া, দেওবাড়ী, , ছোটমৌশা, , সিলিমপুরসহ। নদের পশ্চিমপাড় বাসাইল উপজেলার কাউলজানী, বাদিয়জান, মান্দারজানী, , ফুলকী, ঝনঝনিয়া, ময়থা, কলিয়া, এবং কালিহাতী উপজেলার গান্ধিনা ও পলাশতলীসহ ৩৫টি গ্রাম।
রোববার সকালে খেয়াঘাটে কথা হয় কালিয়ান গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান কামরুলের সঙ্গে। তার ভাষ্য, এ এলাকার মানুষের স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার পর এ নদের উপর একটি সেতু নির্মাণ হবে । এটি সকলের প্রাণের দাবি। কিন্তু ৫৩ বছর পার হলেও সাধারণ মানুষের সেই দাবি এখনও পূরণ হয়নি, শেষ হয়নি প্রতীক্ষার। ১৫০-৬০ মিটার সেতুর জন্য অতিরিক্ত ঘুরতে হয় কমপক্ষে ১৫-২০ কি.মিটার।
শিক্ষার্থীরাও প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে ঝুঁকি নিয়ে নদ পারাপার হচ্ছে। নদের দু’পাড়ের কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। অনেক সময় খেয়া নৌকায় মুমূর্ষ রোগী পারাপার করে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ডিজিটাল যুগে এ ধরনের দুর্ভোগ খুবই অসহনীয়।
নদের পূর্বপাশে সখীপুর উপজেলার কালিয়ান গ্রামে রয়েছে সাপ্তাহিক হাট, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসা। অন্যদিকে নদের পশ্চিমে বাসাইলের কাউলজানী গ্রামে রয়েছে সাপ্তাহিক হাটসহ দুইটি বাজার, বালিকা বিদ্যালয়সহ দুইটি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নৌকার মাঝি নরেন তরুণী দাস জানান, বর্ষার ছয়মাস খেয়ায় ও শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের তৈরি সাঁকোই পথচারীদের নদ পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। মধ্যরাতে দূরের লোকজন খেয়াপাড়ে এসে বিপদে পড়েন। বছরে একবার স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে তোলা ধানের আয়েই চলে আমার সংসার।
কালিয়ান গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবক ও মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত তুহিন সিদ্দিকী বলেন, সেতু না থাকায় এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবার তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি ।
ঘাটপাড়ের বাসিন্দা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, সখীপুরের ভূ-খণ্ড দু’ভাগে বিভক্ত। নিচু ও পাহাড়ি সমতল এলাকা। সেতুর অভাবে থেমে আছে নিচু এলাকার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা। সেতুটি নির্মাণে নির্বাচনের আগে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন, পরে কেউ তা মনে রাখেন না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবদুল বাছেদ বলেন, সেতুটি নির্মাণে ১০০ মিটার অনুর্ধ্ব ব্রিজের প্রকল্পে প্রস্তাব পাঠানো আছে। অনুমোদনের চিঠি পেলেই সেতুটি নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু করা হবে।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম জানান, সেতুটি নির্মাণের প্রতীক্ষা দীর্ঘদিনের। প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চেষ্টা করছি, এ সরকারের আমলেই দরপত্র আহ্বান করার।
No comments