ডেঙ্গু রোগে রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায় এমন খাবার
ডেস্ক নিউজ:
অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এই জ্বর মারাত্মক হতে পারে।
এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীর ব্যথা করে, লাল দাগ দেখা দেয়, পেশি ও হাড়ের জয়েন্টগুলোতেও ব্যথা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে এই রোগে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু প্রথম আঘাত কাটিয়ে উঠলেই যে মুক্তি আসে তা নয়। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুর সংস্পর্শে প্রথমটির চেয়ে বেশি মারাত্মক হতে পারে।
ডেঙ্গু হল একটি জ্বরজনিত রোগ যা এডিস মশা দ্বারা বাহিত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাসের (DEN-1, 2, 3 এবং DEN-4) চারটি স্ট্রেইনের যে কোনো একটির কারণে হতে পারে। আর এই ভাইরাস বহন করে এডিস মশা।
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা খালি চোখেই শনাক্ত করা যায়। এই ধরনের মশার শরীরে কালো এবং সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে, তাই একে টাইগার মশা বলা হয়। এই ধরনের মশা মাঝারি আকারের এবং এর অ্যান্টেনা বা প্রোবোসিস দেখতে কিছুটা লোমশ। পুরুষ মশার অ্যান্টেনা স্ত্রী মশার তুলনায় বেশি লোমশ দেখায়।
ডেঙ্গু জ্বরের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন ডেঙ্গু জ্বরে বেশি জ্বর হয়, কারো সর্দি-কাশি হয়। সেই সঙ্গে শরীরের পেশি ও বিভিন্ন জয়েন্টে অসহ্য ব্যথা হয়। কিছু সারা শরীরে দেখা যায়। অনেকে তীব্র মাথাব্যথা, চোখে বা চোখের পিছনে ব্যথা, বমি এবং মাথা ঘোরা অনুভব করেন।
মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়, যার ফলে রক্তের প্রয়োজন বেড়ে যায়।
মানুষের রক্তে তিন ধরনের ক্ষুদ্র রক্তকণিকার মধ্যে প্লেটলেট হল সবচেয়ে ছোট। যাকে বাংলায় অনুচক্রিকা বলে। মাইক্রোসাইট হল নিউক্লিয়াস, গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি বা রড আকৃতির বর্ণহীন সাইটোপ্লাজমিক ডিস্ক ছাড়া ক্ষুদ্রতম রক্তকণিকা। অস্থি মজ্জাতে কোষ উৎপন্ন হয়।
প্লেটলেট রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং রক্তপাত বন্ধ করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা 150,000 থেকে 450,000 পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্লেটলেট কাউন্ট এই মাত্রার নিচে নেমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।
রক্তে প্লেটলেট কমে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বলা হয়। শুধু ডেঙ্গুই নয়, আরও অনেক রোগে রক্তের সংক্রমণে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যেতে পারে। তবে প্লেটলেট এক লাখের নিচে নেমে গেলে তা সংকটজনক অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
চিকিৎসকের মতে, প্লেটলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে কোনো আঘাত ছাড়াই রক্তপাত হতে পারে। 10,000 এর নিচে রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা সবচেয়ে বিপজ্জনক।
এ সময় শরীরের যেকোনো অংশ থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। তবে NS1 নামক অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা দ্রুত বোঝা যাবে। জ্বর হলে পাঁচ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
এছাড়াও, সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) রক্ত পরীক্ষা করে প্লেটলেটের সংখ্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সাধারণত এক ইউনিট প্লেটলেটের জন্য চারজন দাতার রক্তের প্রয়োজন হয়। প্লেটলেটের এক ইউনিট প্লেটলেটের সংখ্যা 20,000 বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন একটি ব্যয়বহুল এবং জটিল পদ্ধতি। বাংলাদেশের সব হাসপাতালে রক্ত থেকে প্লাটিলেট আলাদা করার মেশিন নেই।
এ কারণে বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী থাকলে আগে থেকে খোঁজ নিতে হবে কাছাকাছি কোন হাসপাতালে প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন ব্যবস্থা আছে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারকে সাধারণত ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয় যদি এটি জটিল হয়ে যায় বা রক্তপাত হয়। এ ক্ষেত্রে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
প্রথমত, প্লেটলেট এক লাখের নিচে হবে, রক্তে হেমাটোক্রিট বা পিসিভি অর্থাৎ প্যাকড কোষের পরিমাণ বেড়ে যাবে, রক্তনালী থেকে প্লাজমা বের হয়ে যাওয়ার সমস্যা হবে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে রোগীর রক্তনালীর দেয়ালের ছোট ছিদ্র বড় হয়ে যায়। এতে রক্ত বা প্লাজমার জলীয় উপাদান রক্তনালীর প্রাচীর দিয়ে ধমনী থেকে বেরিয়ে আসে।
একে প্লাজমা লিকিংও বলা হয়। এতে রোগীর পেটে-বুকে পানি জমতে পারে। এছাড়াও রোগীর রক্তচাপ কমে যায়।
রক্তচাপ কমে যাওয়া একজন ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্লেটলেট কমে যাওয়ার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।
প্লেটলেট কমে যাওয়াসহ আরও কয়েকটি কারণে রোগীর মস্তিষ্ক, কিডনি ও হার্টে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। হেমোরেজিক শক এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ডেঙ্গু জ্বরের এখনো কোনো চিকিৎসা নেই। ফলে রোগের উপসর্গের চিকিৎসা হয়। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে শুরু থেকেই প্রচুর তরল যেমন পানি, ফলের রস খেতে হবে। চিকিৎসা হল প্যারাসিটামল এবং তরল দেওয়া। 10 শতাংশ ক্ষেত্রে, জ্বর কমার পর রোগী সুস্থ হতে শুরু করলেই তখনই হিমোকনসেন্ট্রেশন ঘটতে পারে। একে রিকভারি ফেজ কম বলা হয়
No comments