২৫ বছর ধরে খাজনা দিতে পারছেনা সখীপুরের ভূমি মালিকরা
সখীপুর প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বন বিভাগের সঙ্গে মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২৫ বছর ধরে খাজনা (ভূমি কর) দিতে পারছেন না জমির মালিকরা। জমি রেজিস্ট্রি, নাম রেজিস্ট্রিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব, অন্যদিকে স্থানীয় জমির মালিকরা তাদের জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বর্তমানে ওই সব জমি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলার আটটি মৌজায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের দাবি, এ জরিপের মাধ্যমে জটিলতার সমাধান হবে।
তবে জমির মালিকদের সঙ্গে বন বিভাগের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসন না করে জরিপ শেষ হলে আবারও একই সমস্যায় পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন ভূমি মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ৩৮ হাজার ২৫ একর জমিকে ১৯২৭ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এসব জমির বেশির ভাগই শতবর্ষ পুরনো বসতবাড়ি ও কৃষিজমি থাকায় ওই প্রজ্ঞাপনে আপত্তি তোলেন তৎকালীন জমিদাররা। জমি 1932-36 সালে, আপত্তির কারণে 9,430 একর জমি বন বিভাগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে অবশিষ্ট ২৮ হাজার ৫৯৪ একর জমিকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বন বিভাগ থেকে খালাসকৃত ৯ হাজার ৪৩০ একর জমি পরবর্তীতে স্থানীয়দের নামে এসএ, দিয়ারা রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করে জমির মালিকদের কাছে বন্টন করা হয়। বর্তমানেও জমির মালিকরা বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বাজার নির্মাণ করে সেসব জমি দখল করছে।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের আতিয়া বন (সংরক্ষণ) অধ্যাদেশে বন বিভাগ থেকে বসতভিটা ও কৃষিজমি হিসেবে ছেড়ে দেওয়া ৯ হাজার ৪৩০ একর জমি ভুলবশত বন বিভাগের আওতায় এসেছে। এ কারণে দীর্ঘ এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। বন বিভাগের আপত্তির কারণে স্থানীয় ভূমি অফিস ১৯৯৮ সাল থেকে ওইসব জমির খাজনা আদায় বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় ভূমি মালিকরা ‘ভূমি অধিকার সমতর্ক কমিটির’ ব্যানারে আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। বর্তমানে ভাড়া দেওয়া তো দূরের কথা, পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করতে গেলেও বনবিভাগ বাধা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিজিটাল জরিপের আগে মাননীয় সংসদ সদস্যের দাবি বিবেচনায় নিলে আতিয়া বন (সংরক্ষণ) আইন, ২০১৮ এ প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে ভূমি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। এ ছাড়া জটিলতা থেকে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ফকির শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে আইনি পেশা অনুযায়ী সীমানা চিহ্নিত ও ডিজাইন করা হবে। আমরা দিয়ারা জরিপ বাদ দিচ্ছি না, শুধু বৈধ নথি বা কাগজপত্র দেখান। দিয়ারা, এসএ, সিএসকে সাইটে সার্ভেয়ার। জরিপের মাধ্যমে, প্রতিটি জমির মালিক একটি খতিয়ান নম্বর এবং নকশা পাবেন, যা 100% নির্ভুলতার সাথে অনলাইনে সংরক্ষণ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র সেই খতিয়ানের মাধ্যমেই খাজনা আদায় করা যাবে এবং আমরা আশা করি সখীপুরের দীর্ঘদিনের জমি সমস্যা এই জরিপের মাধ্যমে সমাধান হবে।
No comments