টাঙ্গাইলে সড়ক সম্প্রসারণে গাছ কাটায় হুমকিতে পরিবেশ
রাইসুল ইসলাম লিটন:
টাঙ্গাইল-আরিচা
আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারণ করতে সড়কের দুই পাশের গাছ কাটা হচ্ছে। এতে
পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ
করছে। শতবর্ষী গাছগগুলো রক্ষা করা ও নতুন গাছ রোপণের তাগিদ দিয়েছেন
পরিবেশবাদীরা।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে
জানা যায়, সরকার মানিকগঞ্জের বরাংগাইল থেকে টাঙ্গাইল শহর পর্যন্ত ৫৯ দশমিক
৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়নকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে
টাঙ্গাইল অংশে পড়েছে ৪০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের আওতায় সড়কটির প্রস্থ ১৮ ফুট
থেকে বাড়িয়ে ৩৪ ফুট করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহনসহ মোট
ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এ সড়কে এক হাজার ৯টি ছোটবড় গাছ
রয়েছে। এর মধ্যে শতবর্ষী ও অর্ধশত বছরের পুরাতন গাছও রয়েছে।
সরেজমিনে
দেখা যায়, সড়ক সম্প্রসারণ করতে দুই পাশের পুরাতন গাছগুলো শ্রমিকরা কাটছেন।
টাঙ্গাইল শহরের কাগমারী সেতুর পর মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ গেট পর্যন্ত
বেশ কয়েকটি বড়বড় গাছ কাটা হচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি শতবর্ষী ও অর্ধশত
বছরের পুরনো। এছাড়া সড়কের বিভিন্নস্থানে বড় বড় আম, জাম, কাঁঠাল, কড়ই,
মেহগনিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে
গাছগুলোর ডালপালা কেটে উপড়ে ফেলা হয়েছে। বড় গাছগুলো কেটে খন্ড খন্ড গুড়ি
সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। পুরো সড়ক প্রখর রোদের তাপে মরুভূমির খা খা
করছে।
এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক
মোবারক হোসেন, হায়দার আলী, রোকন সহ অনেকেই জানান, এ সড়কে গাড়ি চালাতে কখনোই
ক্লান্তি ভর করতো না। প্রায় পুরো সড়কে শ’ শ’ গাছের ছায়া ছিল। অপরিচিত যে
কেউ এখানে এলে বনের মাঝ দিয়ে তৈরি সড়ক ভেবে ভুল করতো। গাছ কাটার ফলে পুরো
সড়ক প্রখর রোদে খা খা করছে। রোদের তাপে চালক-যাত্রী সবারই পুড়তে হচ্ছে।
সড়কের
দুই পাশের বাসিন্দা কবির হোসেন, আজমত আলী, নভারণ দাস, আলী হোসেন, কামরুল
ইসলাম সহ অনেকেই জানান, তারাও উন্নয়ন চান। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য
রক্ষা হোক সেটাও তো দেখতে হবে। শতবর্ষী গাছগুলো রেখে অন্য কোনভাবে সড়কের
উন্নয়ন করা যায় কীনা তা ভেবে দেখা দরকার। গাছ কাটার ফলে স্থানীয় পরিবেশের
ভারসাম্য ক্ষুন্ন হবে। তারা সড়কের দুই পাশে দ্রুত নতুন গাছ রোপণের দাবি
জানান।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রণমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর এএসএম সাইফুল্লাহ জানান, যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে তার
অধিকাংশই শতবর্ষী। গাছগুলো কেটে রাস্তার যে উন্নয়ন করা হচ্ছে, সে গাছগুলো
রেখে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় তা আগে ঠিক করা উচিত। হুট করেই গাছ কেটে ফেলা
যায়? একটি গাছ পরিণত হতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং একটি গাছের সাথে অনেক প্রাণির
জীবনের অস্তিত্ব, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সব কিছু
বিবেচনায় নিয়ে গাছ কাটা বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।
তিনি
আরও জানান, যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলো কাটা শুরু হলে জনগনের প্রতিরোধে তা
বন্ধ হয়েছিল। পেট্রোপল বন্দরের পরে ভারতীয় অংশে গাছ সড়ক দ্বীপে রেখে চার
লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে উদাহরণ নিয়ে হলেও
গাছগুলো রেখে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা যায় কী-না ভেবে দেখা প্রয়োজন।
টাঙ্গাইলের
পরিবেশ উন্নয়নকর্মী সোমনাথ লাহিড়ী জানান, নির্বিচারে অসংখ্য গাছ কাটা
হচ্ছে- কিন্তু দেখার বা বাধা দেওয়ার কেউ নেই। সহ¯্রাধিক গাছ কাটার ফলে
পরিবেশের যে কি পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তা পরিমাপ করা যাবে না। পুরনো
গাছগুলো ছায়া দেয়, ফল দেয়, অক্সিজেন দেয়। অথচ সচেতন হয়ে পুরনো গাছ রক্ষা
করার কথা কেউ ভাবেন না। তারা এ সড়ক নির্মাণে শতবর্ষী গাছ কাটার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিবেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বৃক্ষপালন বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মুকুট আবু সাইদ জানান, আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টা ঙ্গাইল
সড়কে ১২টি লটে এক হাজার ৯টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাছগুলোর
জরিপ মূল্য ধরা হয়েছিল ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি
হয়েছে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। সড়ক প্রশস্ত করার পর পুনরায় দুই পাশে নতুন
গাছ রোপণ করা হবে।
তিনি জানান, চারটি প্রতিষ্ঠান
দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে একজন ঠিকাদার
দরপত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে গাছগুলো কাটা শুরু করেছেন।
টাঙ্গাইল
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওলিউল হোসেন জানান, সড়ক প্রশস্তকরণে
দুই পাশের গাছগুলো কাটা হচ্ছে। গাছগুলো না কাটলে সড়ক সম্প্রসারণ করা সম্ভব
হবেনা। তাছাড়া পরিমাপের পর দরপত্রের মাধ্যমে গাছ কাটার অনুমতি পেয়ে
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গাছগুলো কাটছেন।
No comments