ম্যারাথন দৌড়ে বাংলাদেশি লতিফের 'সিক্স স্টার' রেকর্ড
ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: ম্যারাথন দৌড়ে 'সিক্স স্টার' রেকর্ড গড়লেন নিউ জার্সির প্রবাসী বাংলাদেশি আনহার লতিফ। সম্প্রতি টোকিও ম্যারাথনে অংশ গ্রহণকরে অর্জন করেছেন অ্যাবট ওয়ার্ল্ড ম্যারাথন সিক্স স্টার। ছয়টি মেজর ম্যারাথনে অংশ গ্রহণকরে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
তার নিকটাত্মীয় রওশন হক জানান, মা-বাবা সিলেটের হলেও আনহার লতিফ জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের সেন্টপ্লাসিড স্কুল থেকে এসএসসি,মহসিন কলেজ থেকে এইসএসসি পরে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজথেকে গ্রেজুয়েশন করেছেন আনহার ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত। স্কুল কলেজে ফুটবল এবং ক্রিকেট দলের হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট অংশগ্রগন করেছেন। কলেজে পড়াকালীন আন্তঃকলেজ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক্স ইভেন্টে একশত মিটার রিলেতে মহসিন কলেজের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেই থেকে তার খেলোয়াড় জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তারপরই ঠিক করেন দৌড়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
এরপর তিনি উচ্চ শিশিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। বর্তমানে নিউ জার্সিতে বসবাস করছেন। এদেশে এসে খেলাধূলার পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে গেয়েছেন। খেলাধুলার পাশাপাশি কর্ম জীবনেও তিনি সফল। মনটক্লেয়ার ষ্টেট উনিভারসিটি থেকে মেনেজমেনট নফরমেশন সিস্টেম এবং লং আইল্যান্ড এউনিভার সিটিথেকে এমবিএ করছেন। নিউ জার্সিতে হেলথ কেয়ার বিজনেস ইন্টেলিজেন্সে কর্মরত।এ দেশে এসে স্থানীয় ক্রিকেট লীগে খেলেছেন কিন্তু বরাবরই আগ্রহ লং ডিসটেন্সে দৌড়ানো। আর সেই অদম্য ইচ্ছা থেকেই তিনি নিউ ইয়র্ক রোড রানার্সের এনওয়াইআরআর-এর সদস্য হয়েছেন। এই (এনওয়াইআরআর)।এনওয়াইআরআর-এর সেন্ট্রাল পার্কে সারা বছর ধরে একাধিক ম্যারাথন ইভেন্টের আয়োজন করে। তারমধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটি ম্যারাথন বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আনহার ২০০৯ থেকে সালে নিয়মিতনিউ ইয়র্ক সিটি ম্যারাথনে অংশ নেন । সেই সময়ে তিনি নতুন চাকরির নিয়েনিউজার্সিতে স্থানান্তরিত হন। এরই মাঝে তিনি হাফ ম্যারাথন একুশ হাজার এবং লং ডিসটেনস এরসময় ও গতি উন্নতি করার দিকে মনোযোগ দেন এবং সফল হন।
আনহার লতিফ ২০১৫ সালের পর থেকেই বাংলাদেশের হয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি হাফ ম্যারাথন অংশ নিয়েযাচ্ছেন। ২০১৮ সালে তিনি শিকাগো ম্যারাথন অংশ গ্রহনের জন্য মনোনীত হন আর সেইথেকেই তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়ের শুরু।
অ্যাবট ওয়ার্ল্ড ম্যারাথন মেজর সিক্স স্টার হিসাবে ছয়টি ম্যারাথনকে বেছে নিয়েছে, সেগুলি হলবোস্টন, নিউইয়র্ক, শিকাগো, লন্ডন, বার্লিন এবং টোকিও। একজন ব্যক্তি সিক্স স্টার তখনই দাবিকরতে পারে যদি সে এই ছয়টি ম্যারাথন মেজর কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারে। এই ছয়টিম্যারাথনই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যারাথন। এটি অর্জন করা খুব সহজ নয়।
প্রতি বছর বিশ্ব থেকে লক্ষ দৌড়বিদ এতে অংশ গ্রহনের আবেদন করলেও খুব কম সংখ্যক অ্যাবট ওয়ার্ল্ড ম্যারাথনে গৃহীত হয়। ২০২০ সালে ৪৫,৭৬৮১ জন লন্ডনের ম্যারাথন ব্যালটের জন্য আবেদন করেছিল আর মাত্র ১৭ হাজার গৃহীত হয়েছে যা শতকরা ৪ শতাংশ এর কম। গত মার্চের পাঁচ তারিখে অনুষ্ঠিত টোকিওম্যারাথনের হিসাবে বিশ্বে মাত্র ৯০০০ জনেরও কম এই ছয় তারকা খ্যাতি অর্জন করেছেন। যার মধ্যে বাংলাদেশি দৌড়বিদ হিসেব একমাত্র আনহার লতিফ ছাড়া আর কেউ ছিলোনা। আনহার লতিফ তাঁর ম্যারাথন যাত্রা শুরু করেছেন ২০১৮ সালে শিকাগোতে আর এবছরে মার্চেএসে টোকিওতে ম্যরাথন শেষ করে সিক্স স্টার অর্জনের মাধ্যমে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছান। এছাড়াও তিনি বার্লিন (২০১৯, লন্ডনে দুই বার (২০২১-২০২২), এ নিউ ইয়র্ক (২০২১) বোস্টন (২০২২) ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনিই প্রথম গর্বিত বাংলাদেশি অ্যাবটের সব রকম নিয়ম অনুসারে ছয় তারকা পেয়েছেন।
আনহার লতিফ মনে করেন স্ত্রী মুনার সহযোগিতা ছাড়া তার পক্ষে ম্যারাথনের গৌরব উজ্জ্বলসম্পদ সিক্স স্টার অর্জন করা সম্ভব হতো না। মুনা তার দৈনন্দিন ডায়েট থেকে পোশাক সবইদেখাশোনা করেন। শুধু তাই নয় একজন দৌড়বিদের জন্য সময় সূচি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই স্ত্রীমুনা একজন ট্রেনার এর মত খাবার ছাড়া ও তার দৈনন্দিন সময়সূচীর উপরে কড়া নজর রাখেন। একজন সফল দৌড়বিদের স্বাস্থ্য ডায়েট সবচেয়ে জরুরী বিষয় তাই মুনা সুসম খাদ্য তালিকাতৈরী করে নিজেই রান্না করেন। তাই সব মিলিয়ে আনহা সিক্স স্টার অর্জনের পেছনের কারিগর স্ত্রী মুনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আনহার লতিফ নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। সপ্তাহে ৪০/৫০ মাইল দৌড়ান। দৌড়বিদ হয়েইথাকতে হলে ফিটনেস ধরে রাখতে হবে তাই খাদ্য তালিকায় কার্ব মেনটেইন করে ফল, সব্জি, সালাদ, মাছ মাংস বেক অথবা গ্রিল করেই খেতে পছন্দ করেন তিনি।
ম্যারাথন এ দৌড়াতে যেয়ে কোন বিশেষ অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি ম্যারাথন দৌড়েই তার ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা রয়েছে তবে উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা হল সম্প্রতি টোকিও ম্যারাথন। আনহার লতিফে বাবা মারা যাওয়ার ঠিক এক মাস পরেই তিনি ম্যারাথন দৌড়েছেন। পিতার অসুস্থতা ও পরে মৃত্যু সব মিলিয়ে দেশে আসা যাওয়ার কারনেনিয়মিত শরীর চর্চা ও দৌড় প্রাকটিস ব্যহত হয়। যেহেতু মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না এবং প্রশিক্ষণেও ঘাটতি ছিল বলে তিনি এবারের টোকিও ম্যারাথনে অংশ না নেয়ায় পরিকল্পনা করছিলেন, কিন্তু পরক্ষনেই বাবার কথা মনে হয়। তার বাবার ম্যারাথন নিয়ে আগ্রহ ছিলো প্রচুর। তিনি সব সময়ই এই বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে চাইতেন। তাই বাবাকে মাথায় রেখেই তিনি এবারের টোকিও ম্যারাথন শেষ করে সিক্স স্টার অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় ছয় তারকা অর্জনের জন্য ছুটছেন।
No comments