ঘাটাইলে উত্তপ্ত আ.লীগের রাজনীতি
ঘাটাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে পাল্টা হামলা ও মামলা দায়েরের ঘটনায় উত্তপ্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে হামলা ও মামলা হয়েছে।
তবে ঘটনাগুলো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঘিরে আবর্তিত হলেও এর পেছনে প্রধান দল আওয়ামী লীগের দুটি প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে বলে ঘাটাইলের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব আবারো প্রকাশ পেয়েছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার অনুসারীরা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেবুর অনুসারীরা হামলা চালায়। আহত হন রানা পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার তালুকদার ও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী মোঃ জুনায়েদ। জুনায়েদকে তরবারি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জুনায়েদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় গত ২৭ এপ্রিল জুনায়েদের ভাই জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শহিদুল ইসলাম লেবুর ১৬ অনুসারীসহ ১০-১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর আবু সাইদ এলাকার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু সাইদ ওরফে রুবেল মো. গত ৪ মে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন।পরদিন ভোরে সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালায়। ৫ মে। তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (এমএমইসি) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আহত আবু সাঈদ ঘাটাইল জিবিজি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি)। তিনি ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওরফে লেবুর অনুসারী। আবু সাইদের ওপর হামলার জন্য টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ওরফে রানার অনুসারীদের দায়ী করেছেন শহিদুল ইসলাম।
আবু সাঈদের স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন আবু সাঈদ ঘাটাইল সকাল ৮টার দিকে জিবিজি কলেজ গেট এলাকায় যান। এ সময় দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত একদল যুবক তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সাঈদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, টাঙ্গাইলসহ সারাদেশের মানুষ জানে আমানুর রহমান খান রানা একজন সন্ত্রাসী। তারা কখনো রাজনীতি করেনি। তারা সন্ত্রাসী-পাচারকারী। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান খান রানা। তাই ঘাটাইলবাসী তাদের কাছ থেকে শান্তিপূর্ণ বা ভালো পরিবেশ আশা করতে পারে না। রুবেলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয় নিজ বাড়িতে। তার নির্দেশেই এই হামলা। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে অপরাধীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমি আশঙ্কা করছি, সুযোগ পেলে আমার ওপর বড় ধরনের হামলা হতে পারে।
এ ব্যাপারে আমানুর রহমান খান রানা গ্রুপের নেতা আনেলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তালুকদার মোঃ শাহজাহান বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ও তার অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যেকোনো ঘটনার জন্য দায়ী। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চান শহিদুল ইসলাম। তাদের কেউই সাঈদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, আবু সাঈদ ওরফে রুবেলের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। জেলা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
No comments