নিউইয়র্কে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসব
এমা এলিস/বাংলা প্রেস, নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জমকালো আয়োজনে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসব। শনিবার (৬ মে) নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত সংগীতশিল্পী ড. রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্ম প্রাপ্ত নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রধান অতিথি ছিলেন। উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন তিনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম এবং ভারতের কনসাল জেনারেল রণধীর জয়সুয়াল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেঙ্গল কনফারেন্স নামে পরিচিত ভারতীয় বাঙালিদের বৃহত্তম সংগঠন, বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ বা বাংলার সাংস্কৃতিক সংঘ- আয়োজকরা উল্লেখ করেছেন যে সিএবি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গলি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড একটি অংশীদার সংস্থা হিসাবে যোগদান করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক থেকে একুশজন পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক উপস্থিত ছিলেন। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা। নুরুন নবী, ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকার, ভারতীয় লেখক আলোলিকা মুখোপাধ্যায়, ভারতের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত বাংলাদেশি আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। রবীন্দ্রনাথের বংশধর, শিল্প-ইতিহাসবিদ, প্রখ্যাত গ্যালারিস্ট সুন্দরাম ঠাকুরও এই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৫টি রাজ্যের কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, কলাকুশলী ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা অংশ নেন। উৎসবে বাংলাদেশি, ভারতীয়দের অন্তত ১৫টি সংগঠন অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ভাষার বিদেশী সংগঠনগুলোও পরিবেশন করে।
আয়োজকরা জানান, অভিবাসীদের জীবনে প্রথম বাঙালি নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন, চিন্তা ও আদর্শকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়াই মূল লক্ষ্য। রবীন্দ্র উৎসবের প্রথম দিনে ছিল ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন যা উৎসবকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
উৎসবের প্রথম দিনে বাংলাদেশি আমেরিকান শিল্পীরা তাদের শিল্পের মাধ্যমে রবি ঠাকুরকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের আঁকা ছবিও প্রদর্শন করা হয়। উৎসব প্রাঙ্গণে রবি ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ বিতর্ক ও বিদেশীদের চোখে রবীন্দ্রনাথের ওপর তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসবের প্রথম দিনে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'শেষের কবিতা' ও 'তাসের দেশ' এবং 'রক্ত করবী', 'ভানু সিংহের পদচিহ্ন' গান ও নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। নারী পত্র ও মিচে কোলাহল নামে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। নিউইয়র্কের শ্রী চিন্ময় সেন্টারের ত্রিশজন বিদেশী শিল্পী রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন।
পরিবেশিত হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ চরিত্র নিয়ে প্রেম বিতর্ক, রবি ঠাকুরের জীবনে নারীর ভূমিকা বিষয়ের ওপর 'ওরা সন্ধ্যার মেঘমালা' ও 'কর মিলন চাও বিরহী' শিরোনামের দুটি অনুষ্ঠান।
শনিবার বিকেলে সাহিত্য একাডেমির সহযোগিতায় রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জোতিপ্রকাশ দত্ত। নুরুন নবী প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মৃদুল আহমেদের উপস্থাপনায় সোনিয়া কাদের, এবিএম সালেহ উদ্দিন, পলি শাহিনা, আবু সাঈদ রতন, লায়লা ফারজানা ও শেলী জামান খান আমার রবীন্দ্রনাথ শিরোনামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আশরাফ আহমেদ রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ও চিন্তা নিয়ে আলোচনা করেন। মাহমুদ হোসেন দুলু সঙ্গীত ও সুরে রবীন্দ্রনাথের বাউল গানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন, গীতাঞ্জলি ও নোবেল নিয়ে আলোচনা করেছেন সৌদ চৌধুরী, আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আলোচনা করেছেন আবদুল্লাহ জাহিদ। মনিজা রহমানের উপস্থাপনায় রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন মনজুর আহমেদ।
মনজুর কাদেরের সঞ্চালনায় কবিতা পাঠে উপস্থিত ছিলেন- শামস আল মমিন, কাজী আতিক, রানু ফেরদৌস, ফারহানা ইলিয়াস তুলি, নীরা কাদরী, এইচ বি রিতা, রওশন হাসান, খালেদ শরফুদ্দিন, শামস চৌধুরী রুশো, ইশতিয়াক আহমেদ রুপু, নাওয়ার সেলিম, সুরত প্রমুখ। বড়ুয়া, বেনজীর শিকদার। , সালেহীন সাজু, লুৎফা হক ও তাহমিনা খান, ফারহানা হোসেন, ভায়োলা সেলিনা, সোহানা নাজনীন, সবিতা দাস, মিয়া আসকির, সুলতানা ফিরদৌসী, রুপা খানম ও তামান্না আহমেদ।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের শুরুতে তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হলেও শেষে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে।
No comments