নাগরপুরে পান চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জহিরুল
নাগরপুর প্রতিনিধি: নাগরপুরে প্রথম পান চাষ করেন জহিরুল ইসলাম (৩৫)। সে নাগরপুর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের মৃত সরব আলীর ছেলে।
জহিরুল ইসলাম অন্যান্য দর্জির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়তি আয়ের আশায় নানা পরিকল্পনা করে আসছিলেন। এ জন্য অনেকের পরামর্শও নিয়েছেন তিনি। পরে রাজশাহীর এক আত্মীয়ের পরামর্শে জহিরুল প্রথম টাঙ্গাইলে পান চাষের সিদ্ধান্ত নেন। নিজের কিছু জমি ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে পান চাষ শুরু করেন জহিরুল। আর এ কাজে তিনি সফলও হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধু নাগরপুর নয়, টাঙ্গাইল জেলায়ও বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হয় না। অথচ জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই রয়েছে পানের প্রচলন।
জহিরুল ইসলাম জানান, পার্শ্ববর্তী দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি বাজারে একটি দর্জির দোকানে দর্জির কাজ করতাম। সেই কাজ থেকে উপার্জিত আয় দিয়ে সংসার চলছিল। তখন থেকেই আমি ভিন্ন কিছু করার কথা ভাবতে শুরু করি। এমন সময় রাজশাহী থেকে আমার এক বন্ধুর ভাগ্নে গ্রামে বেড়াতে আসে। আমি আমার বন্ধুর ভাতিজা বজলুর রহমানের কাছ থেকে পান চাষের কথা জেনেছি। পান চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। বিষয়টি জানার পর আমি রাজশাহীর দুর্গাপুরে সুপারি চাষ দেখতে যাই। এরপর এ ফসল উৎপাদনে উৎসাহ বেড়ে যায়। দেড় বছর আগে নিজের জমির কয়েক শতাংশ নিয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিছু জমি লিজ নিয়ে রাজশাহী থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার সুপারি চারা এনেছিলাম। ২৫ শতাংশ জমিতে আবাদ করা হয়নি। তারপর উপরে পাট ও শামিয়ানা দিয়ে চারপাশে ভেড়ার সাথে ছায়ার ব্যবস্থা করি। চারা কেনা থেকে শুরু করে ছাউনি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আমি গত নয় মাস ধরে পান তুলতে শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে আমি আমার এলাকার বিভিন্ন দোকানে পান বিক্রি করতাম। এখন পানের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। তাই শুধু নিজের এলাকায় নয়, ঢাকা ও রাজশাহীতেও পাইকারি বিক্রি করছি। পান বিক্রির গত ৯ মাসে আমার বিনিয়োগ বেড়েছে। এখন বিক্রি করছি তার সবকিছুই লাভ.
জহিরুল বলেন, আগে চিন্তিত ছিলাম। পান উৎপাদন হবে কি হবে না। এখন সেই চিন্তা শেষ। অন্যান্য এলাকার মতো আমাদের এলাকায় পান চাষ সম্ভব। এটা প্রমাণিত হয়েছে। আর্থিক সহায়তা পেলে আরও জমি লিজ নিয়ে পান চাষ করতে চাই।
এদিকে জহিরুলের সাফল্য দেখে এলাকার আরও অনেকে পান চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
ভাতশালা গ্রামের মো. সোলায়মান বলেন, জহিরুলের পান চাষ দেখে আমরা জেনেছি, অন্য অনেক ফসলের চেয়ে পান চাষ অনেক সহজ। খরচ ও শ্রম অনেক কম। আমিও পান চাষের কথা ভাবছি।
সোনা মিয়া নামে আরেক কৃষক জানান, সারা বছরই পানের চাহিদা থাকে। এতে প্রমাণিত হয়েছে টাঙ্গাইলের জমি পান চাষের উপযোগী। আমি আমার নিজের জমিতে পান চাষ শুরু করব।
নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, জহিরুল পান চাষে সফল। পান একটি অর্থকরী ফসল। জহিরুলসহ যারা পান চাষে এগিয়ে আসতে চান তাদের কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করবে।
No comments