বেপরোয়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় টাঙ্গাইলের এক বছরে ঝরল ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    বেপরোয়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় টাঙ্গাইলের এক বছরে ঝরল ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ


    মো.নজরুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক:

    টাঙ্গাইলে পেরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে দূর্ঘটনার কবলে গত এক বছরে অকালে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী। হিরোইজমের প্রভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোয় কিশোর-যুবকরা দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছে বেশি।

    বেপরোয়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়  টাঙ্গাইলের এক বছরে ঝরল ২০ জন শিক্ষার্থীর  প্রাণ
     

     মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই ঝরেছে ৮ শিক্ষার্থীর প্রাণ।


    ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে ঘাটাইল উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের এগারকাহনিয়া গ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নাঈম খান (১৫) ও শাকিল খান (১৫) নামে দাখিল পরীক্ষার্থী দুই বন্ধু নিহত হন। এ সময় তাদের অপর বন্ধু রানা মিয়া (১৭) গুরুতর আহত হন। তারা তিনজনই এবার উপজেলার মূলবাড়ী দারুস সন্নাহ দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছিল।


    ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার যোকারচর এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ও কাভার্ডভ্যান চাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, কলেজ শিক্ষার্থী দুই বন্ধু জহিরুল ইসলাম (২২) ও সবুজ মিয়া (২৫)। এতে তাদের এক বন্ধু আহত হন। নিহত জহিরুল ইসলাম (২২) কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নে বল্লভবাড়ী গ্রামের আশরাফ মিয়ার ছেলে ও সবুজ মিয়া (২৫) ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পাথাইলকান্দি গ্রামের মজিদ মিয়ার ছেলে।


    পুলিশ জানায়, তিন বন্ধু মোটরসাইকেল যোগে টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে যাচ্ছিলেন। যোকারচর এলাকায় পৌঁছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের উপর পড়ে যায়। এ সময় কাভার্ডভ্যানটি মোটরসাইকেলের ওই দুই আরোহী চাপায় দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তাদের মৃত্যু হয়।


    ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সখীপুরের এসএসসি পরীক্ষার্থী আদনানের (১৫) মৃত্যু হয়। তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। 


    ৪ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর নামক স্থানে শরিফুল ইসলাম সবুজ নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। সে টাঙ্গাইল শহরের বিবেকানন্দ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।


    ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সিয়াম (১৬) নিহত হয়। একই দিন সখীপুরে মোটরসাইকেল ও ট্রাকের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শামীম আল মামুন (২৫) নামে আহত এক ছাত্র চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।


    ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় দিনই টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় কিশোর-যুবক শিক্ষার্থীরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছে ও আহত হয়ে পঙাগুত্ব বরণ করছে। এছাড়া মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা বাড়ছে। পাড়ায়-মহল্লায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং।  


    এর আগে ৬ জুলাই’২২ মঙ্গলবার মধুপুরের উত্তর আবাসিক এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী আবরার রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। 


    গত ১২ মে’২১ জেলার ভূঞাপুরে বাসের সাথে মোটরসাইকেল সংঘর্ষে জয় তালুকদার (১৫) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। সে উপজেলার গোবিন্দাসী গ্রামের ছানোয়া হোসেন তালুকদারের ছে।ে এবয় গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। এর আগেও ভূঞাপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ স্কুল ছাক্র নিহত হয়েছিল।


    ৮ নভেম্বর’২১ ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়ার চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী তিন স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে।  নিহতরা হলো- উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের ঝাইপাটা গ্রামের মৃত সমির উদ্দিনের ছেলে শরীফ, একই গ্রামের শাহজালালের ছেলে আবু বক্কর ও মৃত রমজান আলীর ছেলে শাহীন। এরা তিনজন ধলাপাড়া এস ইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।


    নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ঝান্ডা চাকলাদার বলেন, স্কুল-কলেজের মোটরসাইকেল আরোহী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ট্রাফিক সিগনালের পরোয়া করে না। তারা প্রায় ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেল রেসিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য তাদের সংগঠন বিভিন্ন ফোরামে কাজ করছে। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন কিশোর-যুবকরা যেন সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালাতে না পারে সে বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো জরুরি। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে মোটিভেশনাল কর্মসূচি নেয়া হবে।


    মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো.  বশীর উদ্দীন খান বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ‘হিরোইজম’ কাজ করে। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে রেসিং করা এই বয়সের একটা বৈশিষ্ট্য। রেসিং করেতে গিয়ে তারা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক অনুশাসনের অভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।


    এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জয়ব্রত পাল জানান, জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় জনবল অপ্রতুল। এরপরও উপজেলাপর্যায়ে নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে টিনএজার মোটরসাইকেল চালকদের জরিমানাসহ মোটিভেশনাল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। টাঙ্গাইল শহরের জন্য পৃথক একটি টিম প্রতিনিয়ত টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কার্যক্রম আরো গতিশীল করার জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা মোটরসাইকেলকে কেন্দ্র করে যেন কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ড জড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।  




    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728